মোবাইল ফোন রুট কি? কিভাবে মোবাইল রুট করবেন? রুট করার আগে করণীয় এবং রুটের সুবিধা-অসুবিধা কি কি?
আজকে আমি আপনাদের সাথে যে বিষয়টি আলোচনা করতে যাচ্ছি তা হলো- মোবাইল ফোন রুট কি? কিভাবে রুট করবেন? এন্ড্রয়েড ডিভাইস রুট করলে অতিরিক্ত কি কি সুবিধা পাবো? রুট করা কতটুকু ঝুকিপূর্ণ? রুট করার পর করণীয় কি? নতুন এন্ড্রয়েড ইউজারদের খুব কমন প্রশ্ন এগুলো। সহজ ভাষায় তাদের এসকল জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার জন্যই আমার এই পোস্ট। এখন আমি সহজ ভাষায় রুট করার সুবিধা/অসুবিধা/ঝুকি এবং রুট করার পর করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো। আসুন প্রথমেই জেনে নেই - রুট কি, কেন, কিভাবে করবো? আশা করি পোস্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।
❏ রুট কি?
বর্তমানে রুট শব্দটি আমাদের কাছে এতোটাই পরিচিত হয়ে গেছে যে এটাকে আমরা রুট ইউজার বলার পরিবর্তে সরাসরি রুট বলি। সহজ ভাবে বলা যায়,রুট হলো একটি এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর বা প্রশাসক।এটার বাংলা অর্থ হলো গাছের শিকড়।আসলে রুট বলতে সেই পারমিশনকে বুঝায় যেটার মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে তোলা হয়।রুট হলো একটি এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন পারমিশন বা অনুমিত।
এই অনুমতি যদি আপনার ডিভাইসে থাকে তাহলে আপনি যেটা ইচ্ছা করতে পারবেন। যারা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী তারা এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর প্রিভিলেজ ছাড়া কখনো সিস্টেম ফাইল গুলো নিয়ে কাজ করতে পারেন না। ঠিক এমনি ভাবে লিনাক্সেও রুট অনুমিত ইউজার ছাড়া সিস্টেম এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর কাজ গুলো করা যায় না।
লিনাক্সে চালিত সার্ভারে আপনি যা ইচ্ছা করতে পারবেন। এক কথায় যার সব কিছু করার অনুমতি রয়েছে তাকে রুট ইউজার বা রুট বলা হয়। আশাকরি, অনেক সহজে বুঝতে পারছেন যে রুট কি? বা রুট কাকে বলে?
❏ মোবাইল রুট করার নিয়মঃ
কম্পিউটার ছাড়া আগের সময়ে রুট করা সম্ভব হতো না, যখন কেউ রুট করার কথা ভাবতো তখন কম্পিউটার প্রয়োজন হতো।কিন্ত বর্তমানে আপনি রুট করার জন্য এমন অনেক ধরনের rooting apps পেয়ে যাবেন যার মাধ্যমে ৫-১০ মিনিটের মধ্যে নিজের এন্ড্রয়েড ডিভাইস রুট করে নিতে পারবেন।
ফোন root করার এই অ্যাপস গুলো আপনারা google play store থেকে বা গুগল সার্চ করে সহজে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।আমি আজকে আপনাদের এমন ৩ টি মোবাইল রুট করার অ্যাপের বিষয়ে বলবো যার মাধ্যমে সহজে Android mobile root করতে পারবেন।এর জন্য প্রথমে এপস গুলো মোবাইলে ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন এবং প্রয়োজনীয় স্টেপস গুলো ফলো (follow) করুন। মোবাইল রুট করার আগে আপনাদের কিছু বিষয়ে আগে থেকে নজর দিতে হবে। এই বিশেষ নিয়ম গুলো আমি আপনাদের বলবো।তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি android রুট করার অ্যাপস গুলোর ব্যাপারে।
১. King Root : King Root Android App যেকোনো এন্ড্রয়েড মোবাইল রুট করার সব চেয়ে সেরা এবং ভালো অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে প্রমাণীত হয়েছে। কিং রুট অ্যাপ মোবাইলের রুটিং প্রসেস অনেক সহজে সুরক্ষিত ভাবে সম্পন্ন করে।মোবাইল রুট করার যত গুলো এপস রয়েছে তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এই অ্যাপটি। এই অ্যাপ্লিকেশনটি google play store থেকে সহজে ডাউনলোড করতে পারবেন এবং এটার মাধ্যমে কম্পিউটার ছাড়া নিজের মোবাইল কে রুট করে নিতে পারবেন।
২. SuperSU – one click root : SuperSU মোবাইল রুটিং অ্যাপ এর ব্যাপারে আপনারা গুগলে সার্চ করলে সহজে ডাউনলোড লিংক পেয়ে যাবেন। আমি এই অ্যাপের মাধ্যমে আমার নিজের মোবাইল রুট করে ছিলাম। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া মাত্র একটি ক্লিকে আমার এন্ড্রয়েড মোবাইল সফল ভাবে রুট হয়ে গিয়েছিলো। তাই আপনি যদি রুট করার কথা ভাবেন,কিভাবে মোবাইল রুট করবো তাহালে এই SuperSU app ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
৩.FamaRoot : Famaroot app এর মাধ্যমে আপনি মাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমে এন্ড্রয়েড ফোন রুট করে নিতে পারবেন। এই অ্যাপটি আপনি google play store থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না। play store এই অ্যাপ নেই।তবে, গুগলে সার্চ করে আপনি অনেক রকমের ওয়েবসাইট থেকে FamaRoot app download করতে পারবেন।smartphone root করার জন্য এই অ্যাপটি আপনার কাজে আসবে কিনা সেটা এটা ব্যবহার করলে জানতে পারবেন।
❏ মোবাইল রুট করার আগে করণীয়ঃ
- ➤ মোবাইল রুট করার আগে ফোনের চার্জ মিনিমাম ৭০% থাকতে হবে। এতে আপনার rooting process এ কোনো রকম সমস্যা হবে না।
- ➤ রুট করার আগে মোবাইলের সব প্রয়োজনীয় ফাইল, গান, ছবি ব্যাকআপ নিয়ে রাখবেন।
- ➤ উপরের দেওয়া অ্যাপস গুলোর মধ্যে আপনি যেটা দিয়ে মোবাইল রুট করবেন সেটা অবশ্যই ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজে ইনস্টল করতে হবে।
- ➤ রুট করা অ্যাপটি ওপেন করে তাতে দেওয়া স্টেপ গুলো ফলো (follow) করে নিজের smartphone রুট করুন।
❏ রুট করার সুবিধাঃ
- ➤ এন্ড্রয়েডে অনেক প্রিমিয়াম এপস/গেমস আছে যেগুলো ফ্রি ব্যবহার করা যায় না, টাকা দিয়ে কিনতে হয়। কিন্তু আপনি যদি রুট ইউজার হন তাহলে আপনার জন্য প্রায় সবই ফ্রি হয়ে যাবে!
- ➤ ধরুন, আপনি আপনার কয়েক বছরের পুরাতন এন্ডয়েড ফোনটা চেঞ্জ করে নতুন একটা স্মার্টফোন কিনবেন। কিন্তু সমস্যা হল নতুন ফোন কিনলে সবকিছু আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। পুরাতন স্মার্টফোনে আপনার যত এপ্লিকেশন, গেমস ইত্যাদি ছিল তা আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি রুট ইউজার হন তাহলে আপনার ঝামেলা ৯৯% কমে যাবে! আপনার পুরাতন ফোনটাতে যা যা ছিল- যে অবস্থায় ছিল সবকিছু নতুন ফোনে কপি করে নিতে পারবেন- একদম হুবহু। এমনকি ফোনবুক এবং এসএমএস পর্যন্ত হুবহু কপি হয়ে যাবে।
- ➤ সবচেয়ে বড় সুবিধা হল- বিশেষ উপায়ে আপনি আপনার ফোনের র্যাম এবং রম দুটোই বৃদ্ধি করতে পারবেন। তাছাড়া র্যাম এবং রমের ব্যবহার কন্ট্রোল করে ফোনের স্পিড অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
- ➤ ফোনের সাথে অনেক অপ্রয়োজনীয় এপস দেয়া থাকে- যেগুলা ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময় একটিভ থাকে। ফলে ব্যাটারীর উপর সবসময় একটা চাপ থাকে এবং ব্যাটারী দ্রুত ডিসচার্য হয়ে যায়। তাছাড়া এসব এপস ফোনের মূল্যবান স্টোরেজ স্পেস এবং র্যাম দখল করে রাখে। রুট করলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
- ➤ ফোনের ডিফল্ট বুট লোগো, বুট এনিমেশন, ওয়ালপেপার, রিংটোন, বাংলা এবং ইংরেজী ফন্ট ইত্যাদি পরিবর্তন করা যায়। ধরুন, আপনি রিয়েলমি কোম্পানীর একটা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফোনটি চালু করার সময় যে বুট এনিমেশন দেখা যায় এবং ওপেনিং সাউন্ড শুনা যায় তা আপনার পছন্দ না। আপনি রুট ইউজার হলে রিয়েলমি এনিমেশন/সাউন্ড পরিবর্তন করে অন্য যে কোন ব্র্যান্ড এর এনিমেশন/সাউন্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
- ➤ কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড এপস আছে যেগুলো আপনার অজান্তেই আপনার মূল্যবান ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করে আপনাকে ফতুর করে দেয়!! এই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান রুট। রুট করলে কোন এপস ইন্টারনেট এক্সেস পাবে আর কোনটা পাবে না তা আপনি নিজেই ঠিক করে দেবেন।
- ➤ অনেক এপস আছে যেগুলো ব্যবহার করলে কিছুক্ষণ পরপর বিজ্ঞাপন দেখায়। এটি খুবই বিরক্তিকর লাগে। ফোন রুট করলে বিজ্ঞাপনের এই যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ➤ রুট করার পর নিজের বিভিন্ন কাষ্টম রম ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। এন্ড্রয়েডের লেটেস্ট ভার্শন আপডেট দেয়া যায়।
- ➤ এর বাইরেও আরো হাজারটা সুবিধা আছে- যা বলে শেষ করা যাবে না। এক কথায় বলতে গেলে, লবন ছাড়া তরকারী খেতে যেমন লাগে- রুট না করে এন্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করলে তেমনটাই লাগে!
❏ রুটের এত সুবিধা তাহলে এন্ড্রুয়েড মোবাইলে কেন রুট করা থাকে না ?
মোবাইল প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান যখন তাদের মোবাইল গুলো বাজারজাত করে তখন মোবাইল গুলোতে রুট পারমিশন দেওয়া হয় না । কারন হল রুট পারমিট করা থাকলে আপনি তখন আপনার মোবাইলে যে কোন কিছু করতে পারবেন । আপনি মোবাইলের রুট ফোল্ডাররে যেতে পারবেন ( মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম ফোল্ডার ) । আপনি যে কোন ফাইল ডিলিট , এডিট করতে পারবেন । আপনার মোবাইলে যখন রুট পারমিট করা থাকবে তখন আপনি কোন ফাইল ডিলিট বা সরিয়ে নিলে আপনাকে কোন ওয়ার্নিং দিবে না । আপনি হয়ত মনে করছেন এই ফাইল গুলো আপনার কোন প্রয়োজনে আসবে না আর তাই আপনি ফাইল গুলো ডিলিট করে দিয়েছেন । হয়তো আপনি কাস্টমাইজ করতে গিয়ে বা রম ইন্সটল করতে গিয়ে ভুল করে ফোন ব্রিক করে ফেলেছেন । এতে কিছুক্ষণ পর দেখতে পারলেন যে আপনার মোবাইল আর চালু হচ্ছে না । আপনি তখন আপনার মোবাইল প্রস্তুত কারকে দোষারোপ করতে থাকবেন । যদি রুট না থাকতো তাহলে আপনি ফাইল গুলো ডিলিট এডিট তো দুরের কথা আপনি ওই ফোল্ডারটি খুজে পেতেন না । ফোন প্রস্তুতকারক আপনাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিলেও এই সব পারমিশন তারা তাদের সুবিধার্থে দেয় না । এটা করা হয় আপনার ভালোর জন্যই ।
❏ রুট করার অসুবিধাঃ
বর্তমানে অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি রুট এপ থাকার কারনে রুট করাটা সহজ এবং নিরাপদ হয়ে গেছে। খুব সহজেই এখন যে কোন ব্র্যান্ড এবং নন-ব্র্যান্ড ফোন রুট করা যায়। কিন্তু সমস্যাটা দেখা দেয় রুট করার পর। রুট করার পর আপনি যদি না বুঝে ফোনের গুরুত্বপুর্ণ কোন এপস/ফাইল ডিলিট অথবা মডিফাই করে দেন তাহলেই সমস্যা। নইলে রুট করার ক্ষেত্রে তেমন কোন ঝুকি নেই।
- ➤ মোবাইল রুট করার ফলে আপনার মোবাইলের warranty শেষ হয়ে যাবে।
- ➤ Root করার ফলে OS থেকে অটোমেটিক আপডেট নাও আসতে পারে।
- ➤ ফোন রুট করার সময় অবশ্যই ভালো করে স্টেপস গুলো পড়ে বুঝে ফলো করুন। না হলে ফোনটি চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ➤ Root করার ফলে আপনার মোবাইলে নানা ধরনের ক্ষতিকারক ভাইরাস আক্রমন করতে পারে। যার ফলে মোবাইলের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে।আমার নিজের ফোনটি রুট করার ফলে অনেক স্লো হয়ে গেছিলো। তাই আপনার ফোনও স্লো হয়ে যেতে পারে।
বিদ্রঃ প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের প্রত্যেকটি মডেলের জন্য আলাদা রুটিং মেথোড থাকে, আলাদা কাষ্টম রিকোভারী ফাইল থাকে। তাই আপনার ফোনের রুট করার পদ্ধতি জানার জন্য এবং কাষ্টম রিকোভারীর জন্য গুগলের সাহায্য নিন। সার্চ করুন - প্রথমে আপনার স্মার্টফোনের মডেল লিখে তারপর ‘রুট’ শব্দটি লিখুন। যেমন ধরা যাক, আপনি Realme 12 pro plus ব্যবহার করেন। তাহলে এই ফোনটি রুট করার পদ্ধতি জানার জন্য আপনি গুগলে সার্চ দিন এইভাবে- “Realme 12 pro plus রুট”। যদি বাংলা কোন টিউটোরিয়াল ইন্টারনেটে থাকে তাহলে সেটা পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান তাহলে “Realme 12 pro plus"ইউটিউব এ লিখে সার্চ দিন অসংখ্য বাংলা/ইংরেজী টিউটেরিয়াল পাবেন। এছাড়া ফেসবুকে প্রায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রত্যেকটা মডেলের আলাদা আলাদা গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপে রুট করার বিস্তারিত পদ্ধতি দেয়া থাকে।
আশা করছি সবাই লেখাগুলো বুঝতে পেরেছেন।যদি আমার কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয় তাহলে ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি কোনো বিষয় বুঝতে না পারেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন,আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
Tags:
Android Tricks And Tips